নূরুল ইসলাম খলিফা:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুমের একটি প্রবন্ধ পড়ছিলাম একটি জাতীয় দৈনিকে। শিরোনাম ‘শিশুদের নৈতিক শিক্ষা’। তিনি পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমদের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। আইজিপি বলেছেন, ‘কিশোরদের বিপথগামী হতে দেয়া যাবে না। কিশোর গ্যাং নামে কোনো দৌরাত্ম্য চলতে পারে না। এ ধরনের যেকোনো দৌরাত্ম্য মোকাবেলা করতে হবে। এটা পরিবারের সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। সন্তানদের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধের সঞ্চার করার দায়িত্ব পরিবার ও সমাজের।’ (নয়া দিগন্ত, ২১ জানুয়ারি ২০২১) এ কথার সাথে দ্বিমত করার কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু কিভাবে হবে এই ধর্মীয় নৈতিকতার প্রশিক্ষণ সে বিষয়ে যেন সুস্পষ্ট কোনো কথা কেউই বলতে পারছেন না। অবশ্য ড. মাসুম দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তার লেখায় । তিনি শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশ্বজুড়ে চরম নৈতিক অবক্ষয়ের কথা ডান-বাম কিংবা মধ্যপন্থী, ধর্মভীরু কিংবা ধর্মহীন সব মহলই কথাটা বলছে। সরকারি-বেসরকারি, আধাসরকারি সবার মুখেই শোনা যায় যে, আমাদের নৈতিকতায় বড় ধরনের ধস নেমেছে এবং এর উন্নয়ন হওয়া দরকার। প্রশ্ন হলোÑ সবাই যখন উদ্বিগ্ন এবং নৈতিকতা বৃদ্ধির সবক দিচ্ছে; তখন নীতিহীন আচরণগুলো করছে কারা এবং কেনই বা ক্রমান্বয়ে এখানে ধস নামছে এটি অনুসন্ধান করা হয়েছে ভালোভাবে, এমন উদ্যোগ খুব একটা চোখে পড়েনি। ‘গেল গেল’ একটা রব আছে; নৈতিকতার উন্নয়ন হওয়া দরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট নসিহত আমরা শুনছি দেশের কর্তাব্যক্তি, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী-আমলা, সমাজবিজ্ঞানী, শিক্ষক, চিকিৎসক ইত্যাদি মানুষের মুখে। কিন্তু কারণ বা প্রতিকার সম্পর্কে তেমন কোনো দিকনির্দেশনা তাদের মুখ থেকে শুনছি না। সুযোগ পেলেই এ মহাজনরা নৈতিকতা উন্নয়নের বাণী দিচ্ছেন; কিন্তু কী করলে মানুষের নৈতিকতার বিকাশ ঘটবে সেটি তারা বলছেন না। এর মানে দাঁড়ায়, তারা জানেন না কোন পথে মানুষের নীতি-নৈতিকতার উন্নয়ন হয় অথবা তারা আন্তরিক নন। তারা নীতিহীন এই ভ্রষ্টসমাজে বেশ ভালো আছেন এবং আমজনতাকে বোকা বানাচ্ছেন তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য।
নৈতিকতার সূতিকাগার হচ্ছে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস। এই বিশ্বাসের বীজ রোপিত না হলে নৈতিকতার জন্মই হয় না। আর এই বিশ্বাসের দাবিগুলো যখন ব্যক্তি ও সমাজে অনুশীলন করা হয়, তখন নৈতিকতার বিকাশ ও উন্নয়ন হয়। ধর্মের মূলনীতিগুলোর অনুশীলনের মাধ্যমেই সমাজে নীতিবোধ ও নৈতিকতা বিকশিত হতে পারে। ধর্মীয় মূল্যবোধগুলোর চর্চা ও অনুশীলনের ক্ষেত্রে শিক্ষাব্যবস্থার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্পবিপ্লবের পরে পুঁজিবাদ থেকে জন্ম নেয়া ভোগবাদের চরম বিকাশের পেছনে সেক্যুলার তথা ধর্মীয় মূল্যবোধহীন শিক্ষার ভূমিকা অনেক বড়। শিক্ষা থেকে এই মূল্যবোধকে বিদায় দিয়ে পাশ্চাত্য যে বৈষয়িক উন্নতির চমক সৃষ্টি করেছে, মাত্র তিন শতাব্দীর মধ্যেই সেটির অন্তসারশূন্যতার প্রমাণ প্রকট হচ্ছে। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের ফলে অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে; কিন্তু একই সাথে মানুষের মধ্যে বিভেদ-বৈষম্য, জুলুম-নিপীড়ন, হিংসা-বিদ্বেষ, মাদকাসক্তিসহ অসংখ্য অসৎ প্রবণতার অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। ধর্মীয় মূল্যবোধকে ‘প্রগতি ও উন্নয়নবিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করার যে অশুভ তৎপরতা আজকে পুরো পৃথিবীজুড়ে আমরা দেখছি, তার তীব্র হলাহলে সমাজ-সভ্যতা, মানবিকতা, ন্যায়-নীতি, ভ্রাতৃত্ব-ভালোবাসাসহ মৌলিক গুণাবলির বিলুপ্তি ঘটতে দেখছি আমরা আশঙ্কাজনকভাবে। ফলে এক শতাব্দী আগেও সমাজ ও রাষ্ট্রে যে নীতিবোধ ও নৈতিকতার চর্চা ছিল, সেটি যেন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। শাশ্বত মানবিক মূল্যবোধ যা মূলত ধর্মীয় বিধান থেকেই উদ্ভূত, তাকে এখন সাম্প্রদায়িকতা, চরমপন্থা, পশ্চাদমুখিতা, সঙ্কীর্ণতা ইত্যাদির সমার্থক হিসেবে প্রচার করা চলছে।
শাহ মোহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’, আলাওলের ‘হামদ’, আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’, গোলাম মোস্তফার ‘জীবন বিনিময়’ এবং কাজী নজরুল ইসলামের ‘উমর ফারুক’ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করায় কথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও প্রগতিশীলতার দাবিদার মহলটির আর্তনাদ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ ভুলে যায়নি। তাদের আদর্শ ও আনুগত্য কোথায় তা মানুষের কাছে গোপন নেই। পাঠ্যপুস্তক ‘হেফাজতিকরণ’ করা হয়েছে বলে তাদের চিৎকার এখনো আমাদের কানে বাজে। প্রশ্ন হলোÑ কবি গোলাম মোস্তফা, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাওল কিংবা শাহ মোহাম্মদ সগীর কি হেফাজতের নেতা ছিলেন নাকি তারা কেউ ইসলামপন্থীদের পরামর্শে এসব কবিতা লিখেছেন? কী আছে ‘উমর ফারুক’ কবিতায়? সেখানে তো মানবিকতার শিক্ষা আছে। খলিফা উমর রা: তপ্ত রোদের মধ্যে নিজের ভৃত্যকে উটের পিঠে চড়িয়ে নিজে উটের রশি ধরে হেঁটেছেন। পাদ্রির আহ্বান সত্ত্বে¡ও তিনি তাদের গির্জায় নামাজ পড়েননি। বলেছেন, ‘আমি যদি এখানে নামাজ আদায় করি, সাধারণ মানুষ মনে করবে গির্জা ভেঙে মসজিদ করার ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন খলিফা। আর কারো গির্জা বা মন্দির ভেঙে মসজিদ বানানো ইসলামের বিধান নয়।’ এর চেয়ে উদার ধর্মনিরপেক্ষতার শিক্ষা আর কোথায় আছে? এই কবিতা পড়ে শিশুরা কিভাবে সাম্প্রদায়িকতা শিখবে? ইসলামের কোথাও সাম্প্রদায়িকতার সামান্যতম ইশারাও নেই।
এবারে আমরা একটু চোখ ফেরাতে চাই স্বদেশের দিকে। স্বাধীনতার পরে এই অর্ধশতাব্দী পর্যন্ত দেশের শাসনভার কখনো হেফাজত তথা ইসলামপন্থীদের হাতে ছিল না। ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ আবহেই দেশ পরিচালিত হয়েছে। এরপর ২০০৯ সাল থেকে বলা যায় আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার বন্ধুদের ভাবাদর্শেই একটানা চলছে শাসন। কিন্তু কোন অবস্থানে দেশ পৌঁছেছে? উন্নয়নের মহাসড়কে যে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে তা মেরামত করবেন কী দিয়ে? ‘সাঁকোটা দুলছে’ মার্কা কবিতা পড়িয়ে জাতিকে কোথায় নিচ্ছেন, একটু লক্ষ করুন ।
২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর একটি পত্রিকায় কলামিস্ট ‘অস্থির সময় পার করছি’ শিরোনামে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন। নিবন্ধটি শুরু করেছেন এই ভাষায়, ‘আমরা একটি অস্থির সময় পার করছি, আমাদের মূল্যবোধ নির্বাসিত হতে চলেছে। আমাদের প্রেম-প্রীতি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শিষ্টাচার, ভালোবাসার স্নেহময় ঐতিহ্যের বাঁধন আলগা হয়ে তার বিপরীতে অশ্রদ্ধা, অস্থিরতা, মিথ্যাচার, প্রবঞ্চনা, ধূর্ততা ও হিংসা-বিদ্বেষ আর লোভের অন্ধকার গলিতে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সমাজ কলুষিত হচ্ছে। সমাজ ক্রমশই এক হৃদয়হীন গোষ্ঠীতে পরিণত হচ্ছে।
২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রথম আলোতে বিশিষ্ট কলামিস্ট মরহুম সৈয়দ আবুল মকসুদ ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে অন্তবীক্ষণ’ শীর্ষক নিবন্ধে বলেছেন, ‘দেশের স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক হয়ে গেল (বর্তমানে পাঁচ দশক)। একটি বড় মধ্যবিত্ত শ্রেণী এই সময়ে তৈরি হয়েছে। কিন্তু এতদিনে ওই মধ্যবিত্ত বিদ্বান জনগোষ্ঠীর যে পরিপক্বতা অর্জন প্রত্যাশিত ছিল তা হয়নি। বরং নিম্নমানের শিক্ষাব্যবস্থায় এমন এক শিক্ষিত মধ্য শ্রেণী তৈরি হয়েছে যারা কোনো ন্যায়-নিষ্ঠা ও যুক্তির ধার ধারে না।’
এ সমস্ত উদ্ধৃতি কিসের ইঙ্গিত বহন করে? যাদের উদ্ধৃতি দিলাম, তাদের কেউ ‘হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন’ এ কথা কেউ নিশ্চয়ই মেনে নিতে আপত্তি করবেন না। এই সমস্ত মানুষ কথিত ধর্মনিরপেক্ষ ঘরানারই মানুষ। তারা আক্ষেপ করেছেন দেশ, জাতি, সমাজ রসাতলে গেল, উচ্ছন্নে গেল বলে। কেউ কেউ বলেছেন, সহনশীলতা বাড়াতে হবে, জ্ঞানচর্চা বাড়াতে হবে, মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করতে হবে, মানুষে মানুষে বিভেদ কমাতে হবে ইত্যাদি। বিগত ৫০ বছরের ইতিহাস খুলে দেখুন রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রকের আসনে বসা মহাজন এবং তাদের পাইক-পেয়াদারা এই কথাগুলো কত বেশি বলেছেন এবং অহরহ বলে যাচ্ছেন; কিন্তু এ সংক্রামক ব্যাধির নিরাময় কিসে সে কথা স্পষ্ট করে বলতে বোধ হয় সাহস পান না। ফলে কোনো বাস্তব উদ্যোগও আমাদের চোখে পড়ে না। তারা যে পথে মানুষের উন্নতি অগ্রগতি আনতে চান সে পথটাই ভুল। ফলে বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, সুশাসন, এমডিজি, এসডিজি ইত্যাদি চটকদার শ্লোগান বিশ্ববাসী শুনছে এবং শুনতেই থাকবে, কিন্তু অবস্থা অবনতির দিকেই যাচ্ছে।
আমাদের অসাম্প্রদায়িক (?) বন্ধুরা কি বলবেন সমাজে অনাচার, বৈষম্য, নিপীড়ন এগুলো কি সবই ইসলামপন্থীরা করছে? প্রতিদিন যতগুলো খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি হচ্ছে, পরিসংখ্যান প্রকাশ করুন যে, এর কয়টির সাথে ইসলামপন্থী তথা ধর্মভীরু মানুষের সম্পর্ক আছে আর কয়টির হোতা আপনাদের লালিত ভাবাদর্শের লোকেরা? কয়টি নারী নির্যাতনের সাথে সেক্যুলাররা জড়িত, কয়টির সাথে ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসীরা জড়িত। যাদেরকে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে গালি দেয়া হয়, তারা দেশের কয়জন সংখ্যালঘুর সম্পত্তি, দেবোত্তর সম্পত্তি বা শত্রুসম্পত্তি দখল করেছে, আর সেক্যুলার লোকেরা কী পরিমাণ দখল করেছে পরিসংখ্যানটা পারলে প্রকাশ করুন। পারবেন না, বস্তুবাদী দুনিয়াদার লোকেরা এটা করার মতো হিম্মত রাখে না।
অনেকেই পশ্চিমের দৃষ্টান্ত দিতে চেষ্টা করেন যে, ধর্মনিরপেক্ষ তথা ধর্মহীন সমাজ হয়েও পাশ্চাত্য সমাজে নৈতিকতা আছে। সেখানে চুরি, ডাকাতি, ঘুষ-দুর্নীতি, লুটপাট, হত্যা-ধর্ষণ নেই। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও পরমতসহিষ্ণুতা আমরা সেখানে দেখতে পাই। এককথায়, সেখানে একটি বহুত্ববাদী সমাজ গড়ে উঠেছে। কথাটি আংশিক সত্য। পশ্চিমা দেশগুলোর ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখলেই বোঝা যায় যে, ওদের নৈতিকতা খণ্ডিত ও আংশিক। ধর্মীয় নৈতিকতা থাকলে তাদের এই দ্বিচারিতা থাকত না। ওদের নৈতিকতার রূপ দিনে একরকম আর বাতি বন্ধ করলে আরেকরকম। ওরা নিজের দেশে একটি কুকুরকে নির্যাতিত হতে দেখলে আইন তাকে ধরে ফেলে, কিন্তু বাইরের দুনিয়ার লাখো মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করতে বুক কাঁপে না। ওরা নিজ দেশে রাস্তায় একটি অসুস্থ শিশু দেখলে পরম যত্নে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়; কিন্তু ফিলিস্তিনের শিশুদের লাশ ওদের বুকে কাঁপন ধরায় না। ওরা ‘গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা’ সাজে আবার ওরাই স্বৈরশাসকদের পেছনে অর্থ ও অস্ত্র নিয়ে দাঁড়ায়, তাদের মদদ দেয়। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব না মানার অজুহাতে ইরাকে বোমা মেরে লাখো মানুষ হত্যা বা দেশের পর দেশকে বিরান করতে নৈতিকতায় বাধে না; আবার ওদের নিরাপত্তা পরিষদের ডজন ডজন সিদ্ধান্ত তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া হলেও ওরা ইসরাইল কিংবা ভারতের বিষয়ে নিশ্চুপ। ওরা রোগ কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখলে সাহায্যের ঝুড়ি নিয়ে হাজির হয়; ওরাই আবার নির্দ্বিধায় সারা দুনিয়ার সম্পদ লুণ্ঠন করে ডাকাতের মতো। সুতরাং ওদের নৈতিকতা একপেশে, খণ্ডিত ও মতলবি। নৈতিকতা ও সদাচরণ হতে হয় সর্বমানবিক ও বিশ্বজনীন। সেখানে ধর্ম-বর্ণ ও ভাষার বৈষম্য থাকে না। সুবিচার শত্রুর সাথেও যেমন বন্ধুর সাথেও তেমনি হতে হয়, এর নামই নৈতিকতা।
সুতরাং একটি অসাম্প্রদায়িক, শোষণহীন সমাজ ও পৃথিবী গড়তে ধর্মীয় নৈতিকতার কোনো বিকল্প নেই। শৈশব থেকেই তাই ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে, স্রষ্টার কাছে আত্মনিবেদনের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এক সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান ও চিরন্তন সত্তার কাছে জবাবদিহির ভয় যদি সৃষ্টি না হয়, তাহলে নৈতিকতার শিক্ষা অর্জিত হয় না। ধর্মীয় শিক্ষাকে ধারণ করেই সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তোলা যায় যেখানে মানুষে মানুষে বিভেদ থাকবে না, হিংসা-হানাহানি থাকবে না, থাকবে না অবিচার ও জুলুম। ভোগবাদের সঙ্কীর্ণ চশমাটা চোখ থেকে খুলে দেখুন। সমাজে মানুষকে মানুষ হিসেবে বুকে টেনে নেয়ার মতো উদারতা থাকলে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যেই আছে। অতএব, জুলুম নির্যাতন আর পাপাচারমুক্ত, শোষণ-বঞ্চনা আর কপটতামুক্ত একটি সুন্দর মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মানবসমাজ গড়তে ধর্মীয় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।